৬১ বছর বয়সে অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে, টেক্সাসের শিক্ষাবিদ রিটা পিয়ারসন তার দেয়া একটি TED টক-এ স্মৃতিচারণ করছিলেন, একজন সহকর্মী তাকে বলেছিল, "বাচ্চারা আমাকে পছন্দ করবে সেজন্য আমাকে টাকা দেওয়া হয়না।" তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন: "বাচ্চারা যাদের পছন্দ করে না তাদের কাছ থেকে তারা কিছু শেখে না।'"
আমরা অনেকদিন থেকেই জেনে আসছি যে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সুসম্পর্ক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের অর্জনকে বাড়িয়ে তোলে। সবসময় আমাদের ধারনা ছিল শিক্ষার্থীরা যাদের বেশি বিশ্বাস করে তাদের সাথে ঝুঁকি নিতে তারা নিরাপদ বোধ করে এবং সব কাজে তাদের সেরাটা দেওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। যদিও, এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত এক গবেষণায় ক্লাসের পরীক্ষায় বেশি নম্বর এবং জিপিএ পাওয়ার সাথে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্কের একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করা হয়: এই শিক্ষার্থীদের আরও কার্যকরভাবে শেখানো হচ্ছে বলেই কি তারা আরও বেশি শিখছে? অর্থাৎ: শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক কি আসলেই শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে? দেখা যাচ্ছে উত্তর হল "হ্যাঁ।" এটি প্রথমদিককার কিছু গবেষণার মধ্যে অন্যতম, যেখানে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষকদের নিজেদের উপর শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্কের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। Learning and Instruction (লার্নিং অ্যান্ড ইন্সট্রাকশন) জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় মূলত মিসৌরির ৪-১০ গ্রেডে পাঠদানকারী শিক্ষকদের দুই শিক্ষাবছর জুড়ে সংগ্রহ করা মূল্যায়ন ডেটা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। গবেষকরা উপসংহারে বলেন: ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের এই গবেষণায় পরীক্ষা করা তিনটি জটিল শিক্ষাদান চর্চার কার্যকর বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে: এগুলো হল, বিষয়বস্তুতে জ্ঞানীয় মনোযোগ ( cognitive engagement), সমস্যা সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (critical thinking) এবং নির্দেশনামূলক পর্যবেক্ষণ ( instructional monitoring)… শিক্ষকদের সঠিক সময়ে হাজিরা, নিরীক্ষণ, স্ক্যাফোল্ডিং, ছাত্রদের আরও গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করা, ছাত্রদের দক্ষতার উপর অধিক আস্থা রাখা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার জন্য আরও ভাল কৌশল ব্যবহারে সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। গবেষকরা "প্রতিক্রিয়ার দিক" পরীক্ষা করতেও সক্ষম হয়েছিলেন, যার অর্থ তারা দেখাতে সক্ষম হয়েছিল যে শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক উচ্চ-মানের নির্দেশনা নিশ্চিত করতে পারে এবং তা এর পূর্বশর্ত। এর সত্যতা শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, স্কুলে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শতকরা হার এবং জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় স্কুলের ফলাফলের উপর নির্ভর করে না। এই মুহূর্তে কেন আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি? কারণ আমরা একটি নতুন শিক্ষাবর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা প্রথম সপ্তাহে কিছু সময় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উপর ব্যয় করলে তা ভাল ফলাফল বয়ে আনবে। আমি প্রথাগত, যেমন "এই প্রশ্নপত্রটি পূরণ করুন, স্কুলের নাইটে ফিরে যান" ধরনের কথাবার্তার কথা বলছি না: আমি বলতে চাচ্ছি যে শিক্ষকদের তাদের ছাত্রদের গভীরভাবে জানার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং এর পেছনে সময় বিনিয়োগ করতে হবে এবং এর বিপরীতে ছাত্রদেরকেও তা করতে হবে। এই বিনিয়োগ দীর্ঘস্থায়ী সুফল বয়ে আনবে। এর চেহারা কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমি গত আগস্টে একটি লেখা লিখেছি। তখন আমি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে চিন্তা করেছিলাম, কিন্তু সাম্প্রতিক এই গবেষণা আমাকে শিক্ষকদের ওপর এর প্রভাব নিয়েও চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। অনেক অনেক বছর আগে যখন আমি একজন শিক্ষক ছিলাম, তখনকার প্রচলিত ধারণা ছিল যে, একজন শিক্ষককে স্কুলের প্রথম সপ্তাহগুলোতে অনেক কঠোর হওয়া উচিত। কঠোর নিয়ম-কানুন তৈরি করে দিতে হবে। নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হবে। আপনি একজন ২৩ বছর বয়সী হাই স্কুলের শিক্ষক হলে এটি আপনার জন্য আরও বেশি সত্য, যেখানে আপনি আপনার থেকে মাত্র সাত বা আট বছরের ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ান। শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষ পরিচালনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এর পাশাপাশি সম্পর্ক গড়ার দক্ষতা এবং এর জন্য সময় দেওয়াও প্রয়োজন, যা আমার মতে, একটি শ্রেণীকক্ষ ভালোভাবে পরিচালনার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে। ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। আর এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের লাভও কম নয়।
0 Comments
Leave a Reply. |